Header Ads

মলদ্বারের ব্যথা ও এনাল ফিশারের চিকিৎসা

মলদ্বারের ব্যথা এনাল ফিশারের Treatmant:
মলদ্বারের ব্যথায় অনেক লোক ভুগে থাকেন। ফিশার মানে মলদ্বারে ঘা অথবা ফেটে যাওয়া। এটি দুই ধরনের হয়। তীব্র (একিউট) ফিশার হলে রোগীর মলদ্বারে অসম্ভব ব্যথা হয়। দীর্ঘস্থায়ী (ক্রনিক) ফিশারে ব্যথার তারতম্য হয়। এটি যে কোন বয়সে হতে পারে। তবে তরুণ যুবকদের বেশি হয়। পুরুষ অথবা নারী উভয়েরই এটি সমানভাবে হয়ে থাকে
কারণ এবং কি রে ঘটে? : এটি হওয়ার জন্য সাধারণত দায়ী কোষ্ঠকাঠিন্য অথবা মলত্যাগের সময় কোত দেয়া। ছাড়া শক্ত মল বের হওয়ার সময় মলদ্বার ফেটে যায় বলে মনে করা হয়। যারা আঁশযুক্ত খাবার খান তাঁদের সমস্যাটি কম হয় বলে মনে করা হয়। আঁশযুক্ত খাবারের মধ্যে রয়েছে শাক সবজি, কাঁচা ফলমূল, আলুর ছোলা, ইসবগুলের ভূসি ইত্যাদি। চা-কফি বা মদ খাওয়ার সাথে এগুলোর কোন সম্পর্ক নেই। ঘন ঘন মলত্যাগ বা ডায়রিয়া হলে ফিশার হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। বিজ্ঞানীরা মলদ্বারের ভিতরের চাপ মেপে দেখেছেন। ফিশারে চাপ তেমন একটা বাড়ে না যদিও আঙ্গুল দিয়ে পরীক্ষা করলে মলদ্বার অতিরিক্ত সংকুচিত বলে মনে হয়
উপসর্গ: মলদ্বারে ফিশারের প্রধান লক্ষণ হলো-ব্যথা রক্তক্ষরণ। ধরনের ব্যথা সাধারণত মলত্যাগের অব্যবহিত পরে হয় এবং কয়েক মিনিট থেকে বাহু ঘন্টা ধরে ব্যথা চলতে পারে।প্রকটালজিয়া ফুগাক্সনামক এক ধরনের রোগেও মলদ্বারে ব্যথা হয়, কিন্তু সে ব্যথা মলত্যাগের সাথে সংশ্লিষ্ট থাকে না। রক্তজমাট বাধা পাইলসেও ব্যথা হয়, কিন্তু তখন রোগী মলদ্বারে চাকা আছে বলে অভিযোগ করে। এই রোগে রক্তক্ষরণের পরিমাণ সাধারণত কম। কিন্তু কারো কারো অতিরিক্ত রক্ত যেতে পারে। আমি অল্পবয়সী এক অফিসারকে এরূপ উপসর্গসহ চিকিৎসা করেছি তার অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তীব্র রক্ষশূন্যতা হয়েছিল। দীর্ঘস্থায়ী (ক্রনিক) এনাল ফিশারের রোগী একটু ভিন্ন ধরনের উপসর্গের কথা বলে। তারা কখনও কখনও তাদের মলদ্বারে অতিরিক্ত মাংসপিণ্ড, পুঁজ পড়া, চুলকানি অথবা এসব একত্রে হয়েছে বলে অভিযোগ করে। ক্ষেত্রে রক্তক্ষরণ থাকতে পারে অথবা নাও থাকতে পারে। ব্যথা সাধারণত তীব্র হয় না অথবা অনেক সময় ব্যথা থাকেই না। ফিশারের রোগীরা অনেক সময় প্রস্রাবের সমস্যায় ভোগেন এবং মহিলারা কখনো কখনো যৌন মিলনে বেদনা অনুভব করেন; যদিও রোগীরা বুঝতে পারেন কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণেই এমন হয়েছে তবুও যখন ব্যথা শুরু হয় তখন রোগী ভয়ে টয়লেটে যেতে চান না এবং মলত্যাগের বেগ হলে তাতে ব্যথার ভয়ে সাড়া দিতে চান না
তীব্র ব্যথা সম্পন্ন ঘা (একিউট ফিশার): সময় মলদ্বার পরীক্ষা করলে দেখা যায় সেটা খুবই সঙ্কুচিত অবস্থায় আছে। তীব্র ব্যথার কারণে মলদ্বারের ভিতরের ঘা-টি দেখা দুঃসাধ্য। কোন যন্ত্রও প্রবেশ করানো যায় না। অবশ্য সরু যন্ত্র দিয়ে পরীক্ষা করা যায়
দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা সম্পন্ন ঘা (ক্রনিক ফিশার) : ক্রনিক ফিশার বল হয় যখন একটি সঠিকভাবে চিহ্নিত সীমানার মধ্যে ঘা দেখা যায়। ক্ষেত্রে একটি মাংসপিণ্ড বাগেজদেখা যায়। মলদ্বারের ভিতরেও একটি মাংসপিণ্ড (ঐুঢ়বৎঃৎড়ঢ়যরবফ ধহধষ ঢ়ধঢ়রষষধ) দেখা যেতে পারে যাকে অনেকে টিউমার বলে ভুল করে। ক্ষেত্রে পায়ুপথের ভিতর যন্ত্র দিয়ে পরীক্ষা করা উচিত যাতে টিউমার বা প্রদাহজনিত কারণ চিহ্নিত করা যায়। ফিশার সংক্রমিত হয়ে কখনও কখনও ফোঁড়া দেখা দিতে পারে এবং তা থেকে ফিস্টুলা (ভগন্দর) হয়ে পুঁজ পড়তে পারে
প্রতিরোধ: কোষ্ঠকাঠিন্য যাতে না হয় সে ব্যবস্থা করা উচিত এবং বেশি শক্তি প্রয়োগ করে মলত্যাগ করা উচিত নয়। বারে বারে মলত্যাগের অভ্যাস ত্যাগ করা এবং ডায়রিয়ায় দ্রুত চিকিৎসা করা উচিত
চিকিৎসা; রক্ষণশীল চিকিৎসা: একিউট ফিশার শুরুর অল্পদিনের মধ্যেই চিকিৎসা শুরু হলে বিনা অপারেশনে ভাল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। মল নরম করার, মলের পরিমাণ বৃদ্ধির জন্য আঁশযুক্ত খাবার বেশি খাওয়া উচিত এবং ব্যথানাশক ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে। সিজ বাথ নিলে উপকার হয়। এটির নিয়ম হচ্ছে আধ গামলা লবণ মিশ্রিত হালকা গরম পানির মধ্যে নিতন্ব ১০ মিনিট ডুবিয়ে রাখতে হয়। স্থানিক অবশকারী মলম ব্যবহারে উপকার পাওয়া যায়। এতে যদি পুরোপুরি না সারে এবং রোগটি যদি বেশি দিন চলতে থাকে তাহলে অপারেশন ছাড়া ভাল হবার সম্ভাবনা কমতে থাকে
সার্জিক্যাল চিকিৎসা: মলদ্বারের মাংসপেশীর সমপ্রসারণ করা (এনাল ডাইলেটেশন)- পদ্ধতিটির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার জন্য বেশির ভাগ সার্জন এটির বিপক্ষে। পদ্ধতির জন্য কোন কোন রোগীর মল আটকে রাখার ক্ষমতা ব্যহত হতে পারে
মলদ্বারের স্ফিংটারে অপারেশন: এই অপারেশনে মলদ্বারের অভ্যান-রীন স্ফিংটার মাংশপেশীতে একটি সূক্ষ্ম অপারেশন করতে হয়। অজ্ঞান করার প্রয়োজন নাই। দুই দিনের মধ্যেই রোগী বাড়ি ফিরে যেতে পারেন। অপারেশনের তিন দিন পর স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে পারেন। কিন্তু আমাদের দেশের রোগীরা অনেক দেরী করে অপারেশন করার। যার কারণে অনেক বেশী কাটাছেঁড়া করার কারণে তাড়া তাড়ি কাজে ফিরে যেতে পারেন না
মতামত: বিগত বছরের মলদ্বারের সমস্যায় আক্রান- ২৯,৬৩৫ জন রোগীর উপর গবেষণা করে দেখেছি যে, ৩৫.% রোগী এনাল ফিশারে আক্রান- আমার দেখা এনাল ফিশার রোগীদের ৭৬.৫৭% বিনা অপারেশনে বিভিন্ন ওষুধ উপদেশের সাহায্যে ভাল হয়েছেন এবং ২৩.৪৩% রোগীদের অপারেশন করেছি। রোগীদের ৯৭% সম্পূর্ণরূপে আরোগ্য লাভ করেছেন। বাকী % কমবেশী উপকার পেয়েছেন কিন্তু কারো কারো সামান্য অসুবিধা মাঝে মধ্যে দেখা দিয়েছে। অপারেশনে আমরা রোগীকে অজ্ঞান না করে শরীরের নীচের দিক অবশ করে অপারেশন করেছি। রোগী সম্পূর্ণ সজাগ থেকেছেন। যারা অজ্ঞান হতে চেয়েছেন তাদের অজ্ঞান করা হয়েছে। অপারেশনের জন্য রোগীদের - দিন হাসপাতালে থাকতে হয়েছে। অপারেশনের পর রোগীদের মলত্যাগ করতে সবাই স্বাচ্ছন্দ বোধ করেছেন। অপারেশনের কিছু দিন পর ঘা শুকাবার পর শক্ত পায়খানা হলেও কেউ মলত্যাগের পর ব্যথা অনুভব করেন নি। এই অপারেশনের পর কারও মল আটকে রাখতে অসুবিধা হয়নি। তবে সঠিক পদ্ধতিতে অপারেশন করতে ব্যর্থ হলে মল ধরে রাখতে অসুবিধা হতে পারে। এনাল ডাইলেটেশন করলে পায়খানা আটকে রাখার ক্ষমতা ব্যহত হতে পারে এবং রোগটি আবার দেখা দিতে পারে। সে কারণে আমি কখনই অহধষ ফরষধঃধঃরড়হ বা ঝঃৎবঃপযরহম করি না

অধ্যাপক ডা: একেএম ফজলুল হক

No comments

Powered by Blogger.